/ এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে দুই অধিনায়ক বাবর আজম ও দাসুন শানাকা / সংগৃহীত
২৪খবরবিডি: 'সকালের সূর্য দেখে সব সময় বোধ হয় দিনের পূর্বাভাস মেলে না। তা না হলে টুর্নামেন্টের শুরুতে যে শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানের কাছে পর্যুদস্ত, যে পাকিস্তান মানসিক ধাক্কা খেয়েছিল ভারতের কাছে হেরে, সেই তারাই কিনা আজ এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলছে।'
'বাংলাদেশ, ভারতসহ বাকিরা যেখানে মরুর কাঁটা বিঁধে বিদায় নিয়েছে, সেখানেই আজ মুকুটের লড়াইয়ে বাবর-শানাকারা। এটা ঠিক যে, এই দু'দলের ফাইনালে এসিসির (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল) কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যিক সফলতা হয়তো মিলবে না; এটাও ঠিক যে, আজকের ম্যাচটির উত্তাপ ছাড়াতে কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব কিংবা বৈরিতার ইতিহাসও খুঁজে পাচ্ছে না মিডিয়া। তবে এটাও ঠিক, দু'দলের যে টিম স্পিরিট, ব্যাটার-বোলারদের যে কম্বিনেশন, শেষ ওভারে স্নায়ু ধরে রাখার যে মানসিক শক্তি- তা দিয়ে দর্শক আজ অন্তত নিখাদ ক্রিকেট উপভোগ করার গ্যারান্টি পেতে পারেন। কিন্তু সব ম্যাচের আগেই যে প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে থাকেন সমর্থকরা, তা হলো ফেভারিট কে? এই উত্তর দিতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা সাধারণত র্যাঙ্কিং, দুই দলের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানের ওপর বিশ্নেষণ করে একটি সারাংশে যান। তবে আজকের ম্যাচ ঘিরে ফেভারিটের তকমা অত সহজে কেউ দিতে পারছেন না। শ্রীলঙ্কার সাবেক পেসার পারভেজ মাহারুফ যেমন নিজের দেশকে এগিয়ে রাখলেও 'ফেভারিট' বলতে পারছেন না। 'শ্রীলঙ্কার এই দলটি তারুণ্যে উদ্দীপ্ত। তারা প্রত্যেকেই পারফর্ম করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে শেষ চারটি টি২০ ম্যাচই জিতেছে তারা। ফর্মের দিক থেকে অবশ্যই এগিয়ে থাকবে শ্রীলঙ্কা। তবে সবাইকে মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান কিন্তু আনপ্রেডিক্টেবল দল। তারা নিজেদের দিনে কী করতে পারে, তা সবারই জানা। তা ছাড়া তাদের বোলিং অ্যাটাক এ মুহূর্তে বিশ্বসেরা। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে সামান্য এগিয়ে রাখতে পারলেও পাকিস্তানের সম্ভাবনা কিছুতেই বাদ দিতে পারবেন না।' ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এভাবেই শ্রীলঙ্কার বর্তমান দল নিয়ে নিজের গর্বের কথা শুনিয়েছেন মাহারুফ।'
'টি২০ র্যাঙ্কিংয়ে পাকিস্তান যেখানে দুই নম্বরে, সেখানে শ্রীলঙ্কার অবস্থান আটে। এশিয়া কাপের ফাইনাল খেললেও লঙ্কানদের কিন্তু এই র্যাঙ্কিংয়ের কারণেই এবারের টি২০ বিশ্বকপের প্রথম পর্ব খেলতে হবে। যদিও বাংলাদেশ, ভারতসহ টানা চারটি ম্যাচ জিতে এ মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে দাসুন শানাকার দল। তার ওপর আবার মাত্রই পাকিস্তানকে হারিয়েছে তারা সুপার ফোরের ম্যাচে।
আজ এশিয়া কাপের ফাইনাল 'মরুর মুকুট উঠবে কার মাথায়'
দলের ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা আর কুশল মেন্ডিস ফর্মে রয়েছেন। প্রতিটি ম্যাচেই ভালো একটা শুরু এনে দিচ্ছেন তাঁরা। এ ছাড়া গুনাতিলাকা, ভানুকা রাজাপাকসে আর দাসুন শানাকার স্ট্রাইকরেটও দলকে আশা জোগাচ্ছে। তবে লঙ্কান দলের সবচেয়ে ভরসার জায়গা তাদের অলরাউন্ডার হাসারাঙ্গা, তিনি কিন্তু ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই তিন উইকেট শিকার করেছেন। তাঁর সঙ্গে থিকাসানার স্পিন আর মাদুশঙ্কার পেস নিয়ে দারুণ একটা অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।'
'অন্যদিকে পাকিস্তানের কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে তাদের অধিনায়ক বাবর আজমকে নিয়ে। যদিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে ৩০ রান করেছিলেন তিনি। তবে ওপেনার বাবরের স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ১০৩! এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ৬৩ রান করেছেন তিনি। আজকের বিগ ম্যাচে বাবর আজম যে ঘুরে দাঁড়াবেন, সে আশায় রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। বাবর আজম রান না পেলেও ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন তাঁদের আরেক ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। ১১৯ স্ট্রাইকরেটে এই টুর্নামেন্টে তাঁর মোট রান ২২৬। তবে তিনি ছাড়া পাকিস্তানের ব্যাটারদের আর কেউই প্রত্যাশা মেটাতে পারছেন না। ফখর জামান, ইফতেখার আহমেদ আর খুশদিল শাহরা জ্বলে উঠতে পারছেন না বলেই ব্যাটিং নিয়ে চিন্তায় আছে পাকিস্তান। এর মাঝেই ভরসা হয়ে উঠেছেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজ। দেড়শর কাছাকাছি স্ট্রাইকরেটে রান তুলতে পারেন তিনি। সাতে আসিফ আলি ঝড় তুললেও ইনিংস লম্বা করতে পারছেন না। আজ পাকিস্তানের শিরোপা জয় অনেকটা ব্যাটারদের উপরই নির্ভর করছে। এই আসরে দুটি ম্যাচ শেষ ওভারে গিয়ে জিতেছে পাকিস্তান। সেখানে নাসিম শাহ দেখিয়েছেন স্নায়ু ধরে রেখে কীভাবে ম্যাচ জিততে হয়। ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানের ওই দুটি জয় আজকের ফাইনালেও মানসিকভাবে অনেকটা এগিয়ে রাখবে বাবর আজমদের। তবে ফাইনালের আগে 'টস' ফ্যাক্টর নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত দুবাইয়ের এই মাঠে শেষ ২০ টি২০ ম্যাচের ১৭টিই জিতেছে টস জেতা দলগুলো। যেখানে টস জিতলেই অধিনায়করা প্রথমে বোলিং নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপের মুখে ফেলে দিতে পারছেন। যদিও পাকিস্তান দলের প্রধান কোচ সাকলাইন মুশতাক জানিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নরা কখনোই টস নিয়ে ভাবে না। দু'দলের মোট ২২ বারের দেখায় জয়ের হিসাব- পাকিস্তান ১৩ আর শ্রীলঙ্কা ৯।'
'৩৮ বছরের এশিয়া কাপের ইতিহাসে এর আগে মোট তিনবার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা। যার মধ্যে ১৯৮৬ সালে কলম্বোতে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু পরবর্তী দুটি ফাইনালের ভেন্যু ছিল বাংলাদেশ, যেখানে ২০০০ আর ২০১৪ সালে ঢাকায় মুখোমুখি হয়েছিল এ দুই দল। এ পর্যন্ত এশিয়া কাপের মোট পাঁচবার ফাইনাল খেলে যে দুবার পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তার একটি ছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ও অন্যটি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। দুবাই পাকিস্তানের পরিচিত ভেন্যু হলেও সেখান থেকে এশিয়া কাপের কোনো ট্রফি আসেনি বাবর আজমদের। আজ তাই সেই মরু থেকেই মুকুট তুলতে চায় পাকিস্তান। সমশক্তির দুটি দলের তারাই জিতবে, আজ যারা কিনা স্নায়ু ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে পারবে।'